মিষ্টি কুমড়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সমূহ।

                    

                   মিষ্টি কুমড়া খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সমূহ।

মিষ্টি কুমড়ায় থাকা প্রিবায়োটিক ফাইবার’ অন্ত্রের ভালো ব্যাক্টেরিয়ার জন্য উপকারী। ফলে হজম স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।


ত্বকের সুস্বাস্থ্য:-

ভিটামিন এ, সি এবং ই ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পারে। আর এসবই মিলবে কুমড়া থেকে- জানান শিকাগো ভিত্তিক পুষ্টিবিদ ম্যাগি মিখাইলজিক।

এক কাপ কুমড়ায় থাকে ১০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন সি, প্রায় ১,৯০০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন এ এবং ২.৫ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন ই।

মিখাইলজিক আরও বলেন, “বেটা-ক্যারোটিন পরিবর্তিত হয়ে ভিটামিন এ’তে রূপ নিয়ে অতিবেগুনি রশ্মির কারণে হওয়া ত্বকের ক্ষতি পোষাতে পারে। ভিটামিন সি কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায়, ত্বক রাখে আর্দ্র। আর ভিটামিন ই- একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ‘ফ্রি র‌্যাডিকেল’ থেকে হওয়া ক্ষতি পূরণ করে।


চোখের জন্য উপকারী:-

কুমড়ায় থাকা নানান রকম ভিটামিন খনিজের মধ্যে একটি হল বেটা-ক্যারোটিন, এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের কারণেই কুমড়ার রং হয় উজ্জ্বল কমলা।

মিখাইলজিক বলেন, “এই উদ্ভিজ্জ উপাদান দেহে পরিবর্তিত হয়ে ভিটামিন এ’তে রূপ নেয়। আর এই ভিটামিন যে চোখের জন্য উপকারী সেটা প্রায় সবারই জানা।”এছাড়া লুটেইন এবং জিয়াক্সানথিন মিলবে এই সবজি থেকে। এই দুই উপাদান বয়সের কারণে হওয়া দৃষ্টিশক্তি কমার হাত থেকে বাঁচাতে পারে।

রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে:-


ভিটামিন এ এবং সি উচ্চা মাত্রায় থাকার কারণে দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে কুমড়া।‘অ্যাপলাইড ফুড রিসার্চ’ সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে মিখাইলজিক জানান-  রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করতে এই গবেষণার ফলাফলে নানান রকম ভিটামিন ও খনিজের উৎকৃষ্ট উৎস হিসেবে দৈনিক খাদ্য তালিকায় কুমড়া রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ‘দ্যা ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ হেল্থ’য়ের তথ্যানুসারে পটাসিয়ামের অভাব থেকে কিডনি অর্থাৎ বৃক্কে পাথর হওয়া ও হাড় ভঙ্গুর রোগের সম্ভাবনা বাড়ে।


হৃদস্বাস্থ্য ভালো রাখতে পারে:-

মিখাইলজিক বলেন, “পটাসিয়াম, ভিটামিন সি, আঁশ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উৎস হিসেবে কুমড়া হৃদ-স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।

‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ কার্ডিওলজি’র তথ্যানুসারে রক্তচাপ কমাতে বা স্বাভাবিক রাখতে পটাসিয়াম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। উচ্চ রক্তচাপ সরাসরি হৃদযন্ত্রের ক্ষতি করে। এছাড়া খাদ্য আঁশ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে পারে। ফলে কমে নানান ধরনের হৃদরোগের ঝুঁকি। আর এসব উপাদানই মিলবে কুমড়া থেকে।


দীর্ঘস্থায়ী রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে:-
দেহের অতিরিক্ত ফ্রি র্যাডিকালগুলো অক্সিডেটিভ স্ট্রেস তৈরি করতে পারে, যা হৃদরোগ এবং ক্যান্সারের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। কুমড়া আলফা-ক্যারোটিন, বিটা ক্যারোটিন এবং বিটা-ক্রিপ্টোক্সানথিন সমৃদ্ধ একটি সবজি। এতে থাকা এসব উপাদান সমস্ত ফ্রি র্যাডিকেলগুলো আলাদা করে এবং ক্ষতিকারক কোষগুলো ধংস করে।

চোখের যত্নে:-
এককাপ পরিমাণ রান্না করা মিষ্টি কুমড়া আমাদের চোখের সুস্বাস্থ্য রক্ষা করতে অন্যান্য খাবার থেকে ১০০ গুণ বেশি কাজ করে। বিটাক্যারোটিন ও আলফা-ক্যারোটিনের মতো ক্যারটিনয়েডসমূহ চোখের ছানিপড়া রোধসহ চোখের রেটিনা কোষ রক্ষা করে। তাই চোখকে সচল ও সুস্থ রাখতে আপনার খাদ্য তালিকায় মিষ্টি কুমড়া যোগ করুন।

ডায়াবেটিস বা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে:-

কুমড়ার বীজ রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাসে অনেক সহায়তা করে। কুমড়ার বীজে উচ্চ ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী। হার্ভার্ড স্কুল অফ পাবলিক হেলথ দ্বারা পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, ম্যাগনেসিয়াম গ্রহণ এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকির মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য বিপরীত সম্পর্ক রয়েছে। তাই প্রতিদিন কুমড়ার বীজ খাওয়ার অভ্যাস করুন।

গর্ভবতী মায়েদের জন্য:-
মিষ্টি কুমড়া ও এর বীজ গর্ভবতী মায়েরা তাদের অনাগত সন্তানের সুস্বাস্থ্যর জন্য নির্দ্বিধায় খেতে পারেন। মিষ্টি কুমড়া গর্ভবতী মায়েদের রক্তস্বল্পতা রোধ করে অকাল প্রসবের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।

ওজন কমাতে:-
কম ক্যালোরি এবং উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার মিষ্টি কুমড়া ওজন কমাতে একটি উপযুক্ত খাবার। এছাড়া মিষ্টি কুমড়ার উচ্চ পটাসিয়াম কন্টেন্টও খুব সুন্দরভাবে আপনার শরীরের বাড়তি মেদটুকু সযত্নে ঝরিয়ে দিতে সাহায্য করে। যারা তাদের শরীরের অতিরিক্ত ওজন নিয়ে বিব্রত তারা নিঃসন্দেহে কুমড়া খেতে পারেন।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে:-
মিষ্টি কুমড়ায় প্রচুর পরিমাণে আঁশ থাকায় তা সহজেই হজম করতে সাহায্য করে। হজমশক্তি বৃদ্ধি ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে মিষ্টি কুমড়ার জুড়ি নেই।

বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না:-
মিষ্টি কুমড়াতে আছে প্রচুর পরিমাণে জিংক ও আলফা হাইড্রোক্সাইড। জিংক ইমিউনিটি সিস্টেম ভালো রাখে ও অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া বয়সের ছাপ প্রতিরোধ করতেও মিষ্টি কুমড়া সাহায্য করে।

মিষ্টি কুমড়ার অপকারিতা:-

মিষ্টি কুমড়ার উপকারিতা শুধুমাত্র তখনই কাজে লাগবে যখন এটি পরিমাণ মতো খাওয়া হবে। অতিরিক্ত পরিমাণে মিষ্টি কুমড়া খেলে শরীরের ক্ষতিও হতে পারে।
 
১. সীমিত পরিমাণে খাওয়া হলেই মিষ্টি কুমড়ার উপকারিতা পাওয়া যায় কিন্তু বেশি পরিমানে খেলে অপকার হতে পারে।
২. মিষ্টি কুমড়াতে ভিটামিন-এ এর একটি ভাল উৎস।  এই উপকারী ভিটামিনের পরিমাণ শরীরে অতিরিক্ত হলে গর্ভাবস্থায় মায়ের সমস্যা ও অনাগত সন্তানের জন্মগত ত্রুটি দেখা দিতে পারে।
৩. এটি বেশি খেলে অ্যালার্জি হতে পারে এছাড়া বেশি কুমড়ো খাওয়ার পর গ্যাস বা পেট ফাঁপা হওয়ার মতো উপসর্গ অনুভূত হয়, তাহলে এ বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

Comments

Popular posts from this blog

লাউ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা।